6 Ballygunge Palace

avatar

৬ বালিগঞ্জ প্যালেসের কথা বলেছিলেন স্বনামধন্য হাইভের "সার্বজনীন দাদা", যে কলকাতা গেলে ওখানে ঘুরে আসবার জন্য। চমৎকার নাকি সে রেস্তোরাঁ।
যেমন মানে, তেমন খাদ্য গুনে, আর সাথে নাকি পাওয়ায় যাবে হালকা ঐতিহ্যের ঘ্রান।
ব্যাস, আকর্ষণ বসে গেলো।
সেবার পয়সা-কড়ি ফুরিয়ে যাওয়ায় আর যেতে পারিনি। মাসখানেক পরে যখন আবার যাবার ভাগ্য হলো, তখন তার জন্য আলাদা করে পয়সা রেখে দিলাম।

কিন্তু ওখানে যাবার পর, প্ল্যান পরিবর্তন করে একার জায়গায় জুটে গেলো আরো ৩ জন। পিয়ালী-দি, সনাতন-দা, আর ফাহিমই বা বাদ যায় কেন।
এবং তাদের খরচটাও আমারই হবে। পকেটের কথা ভেবে চিন্তায় পড়লাম পোষাতে পারবো কিনা।
পরে ফাহিমকে বললাম, "সখ অনেক, সাধ্যতেতো টান আছে। ওখানের খাবার-দাবারের দামদর জানিনে, টান পড়লে ধার দিও, দেশে যেয়ে ফেরত দিবোখন।"

হঠাৎ করে সংখ্যা বাড়ার কারণ হলো, এবার কলকাতা এসে উঠেছি ইনাদের বাসায়।
জাদবপুরে, সনাতন-দা আর পিয়ালী-দি'দের বাড়িতে।
গত পাঁচ-ছ দিন ধরে এঁদের বাড়িতে এসে ঘাঁটি গেড়েছি। থাকছি, খাচ্ছি, আর ঘুরে ঘুরে কলকাতা দেখছি।
শুনে মনে হতে পারে, কোনো জ্ঞাতি খুড়ো, বা পিসি অথচ তা মোটেই নয়।
গত পাঁচ দিন আগেও, ইনাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই আমি অজ্ঞাত ছিলাম।

চাকরি বাকরি ছেড়ে যখন বেকার বহুমাস তখন এক দফা ঘুরে এসেছিলাম। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে হয় একটা চাকরির ডাক আসায়। এসে দেখি সে চাকরির জয়েনিং কেবল পেছাতেই থাকে, আর মাঝে পড়ে যায় ঈদ। ভাবলাম এই লম্বা সময় কিই বা করবো, যায় ঢুঁ মেরে আসি কলকাতায়।
সেই সিদ্ধান্ত নেই ঈদের ২/৩ দিন আগেই বোধহয়। যেহেতু বহু মাস ধরে বেকার থেকে, অশ্বমেধ-যজ্ঞে নেমে (ব্যাপক ঘুরাঘুরি) পকেট প্রায় গড়ের মাঠ, কাউচসার্ফিংএ ঘুরছিলাম কারো বাসায় অতিথি হওয়া যায় কিনা দেখতে।
পিয়ালী-দি দেখি প্রায় সাথে সাথেই আমন্ত্রণ জানালেন।

একটু থতমতই খেলাম এমন সু-প্রসন্ন ভাগ্যে।
আর মেয়ে মানুষ বলেতো বিড়ম্বনারও অন্ত নেই। কলকাতায় একেবারেই অচেনা-অজানা একজনের বাড়িতে যেয়ে উঠবো?
আবার ওদিকে টিকিট কাটা হয়নি, বই-রোডে যদি যাই, ভোর বেলাতো বর্ডারেই থাকতে হবে নইলে যা লম্বা লাইনের ফ্যাসাদে পড়তে হবে, উপরের ইমিগ্রেশন সাহস করতেই সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে।
সেখান থেকে আবার যাদবপুর বহুদূর।
কিন্তু থাকার একটা ফ্রি গতি হওয়ায় আমার মুসাফির মন আর মানেনা এক মুহূর্তও, সাত-পাঁচ ভেবে যা হয় কপালে বলে ব্যাগ গোছাতে বসলাম ভোরের প্রাক্কালে।
আলো ফুটতেই ব্যাগ কাঁধে চলে গেলাম মালিবাগে সোহাগের বাস কাউন্টারে। গিয়ে প্রথম বসেই একখানা সিট্ বাগিয়ে যাত্রা করলাম বেনাপোলর উদ্দেশ্যে।

পদ্মা-সেতু হবার পরে এই প্রথম বেনাপোল যাওয়া। পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো, যেটা আসলে হিসাবের তুলনায় বেশ তাড়াতাড়িই। আমিত বসে বসে ভাবছিলাম বেনাপোল বর্ডার বন্ধ হয়ে গেলে থাকবো কোথায়।
দুপুরে নেমে বাংলদেশ সাইডের ইমিগ্রেশনে উকিঁ দিয়ে দেখলাম লাইন ভালোই লম্বা আছে। কাউন্টারের লোককে একশটি টাকা দিয়ে অনুমতি পত্তর নিতে পাঠিয়ে আমি আড়মোড়া ভেঙে ভাবলাম ভাত খাওয়া উচিৎ। ঈদের আগের এই ইমিগ্রেশনের মুখাপেক্ষী হতে হলে শারীরিক ও মানসিক উভয়ের কল্যানে ভাতের বিকল্প নেই। খেয়ে দিয়ে, চা-টা খেয়ে, হেলেদুলে লাইনে দাঁড়ালাম।
দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো, বনগাঁও থেকে শেষ ট্রেন মিস করলে হবে আরেক ঝামেলা।

ইমিগ্রেশন পার হবার সময় এক কাপড় বিক্রেতা খালার সাথে গল্প হয়।
তিনি বললেন শেষ ট্রেন ধরতে না পারলে তাদের সাথে থেকে যেতে। উনাদের একটা গ্ৰুপ আছে, যারা খুব সস্তায় বনগাঁওতে একটা হোটেলে থাকে। বললাম নিরাপত্তার জন্য আপনাকে কিন্তু পাহারা দিতে হবে।
বললেন, অসুবিধা নেই, অনেকেই থাকবে তাদের মতো।

ভাগ্যিস আগের বারের কিছু খুচরো রুপি ছিল সাথে, এক্সচেঞ্জের ঝামেলায় যেতে হলো না। ও পাশে যেয়েই বনগাঁও স্টেশনের লাস্ট ট্রেন ধরবার জন্য দৌড়ালাম পড়িমরি করে।
আমি স্টেশনে পৌঁছাতেই ট্রেনের বাঁশি পড়লো।
রীতিমত ঘড়ির কাঁটার সাথে দৌড়াতে হচ্ছে।
এদিকে সিম কার্ড সাথে না থাকায়, কাউকে কিছু জানানোর উপায় থাকলোনা।
শিয়ালদহ স্টেশনে যখন পৌছালাম, রাত বাজে সাড়ে ন'টা। অর্থাৎ, আরেকটু পরেই যাদবপুরের শেষ ট্রেন। এদিকে শিয়ালদহ স্টেশনে এর আগে আমি আসিনি।
ট্রেন থেকে নেমে তার বিশালতায় আমি খাবি খাচ্ছি রীতিমত। অদ্ভুত ব্যাপার কাউকে কিছু জিগ্গেস করেও হদিস পাচ্ছিনা।

দুইবার এর মাঝে ভুল প্লাটফর্ম ঘুরে ভুল ট্রেন থেকে নেমে এসেছি।
যেখানেই ট্রেন ধরতে লোক দৌড়াচ্ছে তাদের সাথেই যাচ্ছি আর মাঝ পথে আবার ফিরে আসছি। এরকম করেই তৃতীয় দফায় যে দলের সাথে ভিড়লাম সেটা যাদবপুর যাবে শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। নাইলেতো আজকের রাত শিয়ালদহ স্টেশনেই কাটাতে হবে ভাবছিলাম।
ট্রেনে উঠে পাশের যাত্রীর কাছে মোবাইল চাইলাম একটা কল করবার জন্য। দিলেন না উনি।
পাশের এক তরুণ এগিয়ে দিল তার ফোন।
কল করলাম পিয়ালী-দিদের।
শুনে বুঝলাম ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছেন উনারাও খবর না পেয়ে। জানালাম দশটা নাগাদ ট্রেন জাদবপুর পৌঁছে যাবে।

আমি যখন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যাদবপুরে এসে নামলাম রাত্রি দশটারও বেশি বাজে. আমি চলে আসবো ঠিকানা ধরে বলার পরও, পিয়ালী দি আমাকে স্কুটিতে করে নিতে আসবে জানালেন দাদা।
তরুণটি আমাকে জাদপুর অব্দি নামিয়ে দিলেন। উনার ফোন থেকেই জানালাম দিদিকে আমি স্টেশনে থাকবো।
দিদি এসে আমাকে নিয়ে গেলেন।
এরপর থেকে তাদের আন্তরিকতা আর আপ্যায়নে এমন হলো, যে জাদবপুরে আমার এখখানি ঘরই বানিয়ে এলাম।
যাক সে কথা।

তো এইজন্যই মূলতঃ ভাবা দাদা-দিদিকে নিয়ে বালিগঞ্জ থেকে ঘুরে আসার ইচ্ছে হয় এক না যেয়ে। সেখান থেকেই আবার নতুন ভাবনা চারজনে মাইল সিনেমা দেখবার।
কিন্তু ফাহিম দেশে আসবে ঐদিন রাতেই, তাই আমাকে আবার ওর সাথে যেতে হবে বড়বাজারে, ওর নাকি আঠারো গোষ্ঠীর জন্য শপিং করতে হবে যাদের বেশিরভাগ ভাগীদারই ভাবি, বোন, কন্যা সম্পর্কের।

সুতরাং দাদা-দিদিদের বললাম, তোমরা দুজনে সিনেমা দেখ। দাদাতো এসবে থাকবেই না, কিন্তু আমাদের কথা ফেলতেও পারছেনা। বললাম যায়না বাপু "আমাদের কল্যাণে হলেও, সংসারের ভাঁজে ঝিমিয়ে যাওয়া পুরনো প্রেমটা ঝালিয়ে এস।"

বালিগঞ্জের গল্প করতে যেয়ে রামায়ণ পড়া শুরু করলাম। যাক সেসব কথা।
সবার আগে আমিই গেলাম বালিগঞ্জে প্যালেসে।
খুঁজে পাবার ঝামেলা এড়াতে ইন-ড্রাইভে ট্যাক্সি নিয়ে নিলাম।

Picsart_23-05-23_07-38-45-388.jpg

খুঁজে পেতে দেরি হলো না।
ভেতরে ঢুকতেই একখানা অপেক্ষা-গৃহে নিয়ে বসলো, যে টেবিল খালি হলেই উপরে নিয়ে যেয়ে বসতে দিবে। টেবিল খালি না থাকলে এখানেই অপেক্ষা করতে হয়। বিশাল এক ঝালরওয়ালা শাহী পাখার নীচে কাউচ, চেয়ার পেতে দেয়া।

IMG_20230526_040026.jpg
IMG_20230526_061942.jpg

আশেপাশে পুরোনোদিনের ভাব আনবার জন্য, বেশ আয়োজন এনেছে। সংগ্রহের এন্টিকগুলো নিঃসন্দেহে দারুন। সত্যি মনে হচ্ছে কোনো মহীরুহের দরবারে তাশরীফে এসেছি।

কিছুক্ষন পর টেবিল নাম্বার দিয়ে দিলে, রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে এলো একজন খানসামা।
সত্যিই খানসামায় বটে।
সেকেলে পাগড়ীওয়ালা খানসামার যেমনভাবে সাজে, তেমনই। ভেতরের আবহের সাথে মানিয়েও গেছে।
দৌড়াদৌড়িতে সারাদিন খাওয়ায় হয়নি বলে, মেন্যু দিয়ে গেলেই সেটা খুলে বসলাম।
দামের চেয়ে নাম দেখে চোখ ছানাবড়া।
সব ভুলে আমি মেন্যু পড়তে থাকলাম একে একে। তাদের মেন্যু কার্ডের নকশা দেখেই আমি খাবারের আগেই আপ্লুত হয়ে গেলাম।

IMG_20230526_035811.jpg
ইলিশ মাছের পাতুরি
ইলিশ মাছ ভারী অপছন্দের হলেও, ইলিশ-মাছের-পাতুরি নামটা শুনেই কিছুক্ষণ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেম এই ভেবে যে "খেয়েই দেখবো নাকি!"
IMG_20230526_035900.jpg
চিংড়ি মাছের মালাইকারী! এটা খেয়েছিলাম। সে এক আআশ্চর্য রান্না, পরিবেশন করেছে ডাবের ভেতরে!!
IMG_20230526_035543.jpg
পুরভরা দইপটল
আহাহা! পরেবার যেয়ে চেখে দেখবার লোভ রেখে এলাম বালিগঞ্জে। ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের ঘ্রাণ আসছিলো যেন মেন্যুটি থেকে!
IMG_20230526_035944.jpg
গৌরচন্দ্রিকা!
IMG_20230526_035645.jpg
রাজভোগ
এখান থেকেই পছন্দ করলাম দাদা-দিদি'র জন্য বিখ্যাত নলেনগুড়ের মিঠাই! একটুখানি চামুচ দিয়ে চেখে দেখেছিলাম! আহাহা কি সে অমৃত মুখে পড়লো! এইটা খেতে হবে পরেরবার যেয়ে।
IMG_20230526_035357.jpg
রসনাচরিতামৃত

খেলাম আমরাও বেশ কিছু এটা সেটা...

Picsart_23-05-23_07-34-17-200.jpg

Picsart_23-05-23_07-28-31-760.jpg
এই হচ্ছে সে নলেনগুড়ের আইস্ক্রিম
Picsart_23-05-23_07-56-07-690.jpg
Picsart_23-05-23_07-36-32-859.jpg
খেয়েদেয়ে মোড়ের মাথায় কড়া এক কাপ চা খেয়ে ট্যাক্সি নিলাম ফেরার জন্য।
সেটাও এক মোহনীয় যাত্রা হলো।


রাতের কোলকাতায়, ট্যাক্সির ভেতরে রেডিওতে বেজে ওঠে সেইসব মোহনীয় পুরোনোদিনের তবুও সদা-নবীন গান...

All the contents are mine until it's mentioned.



0
0
0.000
6 comments
avatar

Next time try Saptapadi; they have multiple places. I prefer the one below as it is close to my college para.

Saptapadi Restaurant and Catering Services
+91 84207 22098
https://maps.app.goo.gl/yKDS5HFTFcKZ2z4U6?g_st=ic

It is more reasonably priced than 6 Ballygaunj place.

Since you mentioned Malaikari, below is the picture from Saptapadi. They probably have the best Bhetki Fry in Kolkata.

IMG_1868.jpeg

0
0
0.000
avatar

😯 yes yes, this is what it looked like.
ওদের বেগুন ভাজা, ডাল, আর গোস্ত দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। সত্যি বলতে স্বাদ অত আহামরি লাগে নাই Then gonna try here.
Thank you.
Do let me know of unique tests like these, where delicacy is upholded on a different level!

0
0
0.000
avatar
(Edited)

I re-read this. Was busy last time so didn’t comment in detail. Such a difficult way to cross border!!

Sealdah to Jadavpur was my normal route by the way. Your didi, the picture of her eating, her home was at Jadavpur. Mine was two stations down south at Garia. We used to take the same train you took. Going to college st. Presidency college was easiest back then on that same train. Metro was not extended beyond Tallygaunj back then.

Anyways you literally went to my neighborhood. I thought I tell you that.

0
0
0.000
avatar
(Edited)

Dear heaven you guys were students of Presidency!! This one I took from the premises. If you have old pictures of Presidency, please do show and a little reminisce of your love-story, the vintage love life in Kolkata.
Presidency.jpg

I think I went to Garia as well to roam around. Man I can never get enough of Kolkata. Mostly, the local trains. The by-road immigration from BD side is quite hectic due to all kind of low-cost business and shopping. But it was still memorable and wonderful experience, that I was alone, no interment or mobile, limited cash yet, did not feel scared at all.
It felt like home!

0
0
0.000
avatar
(Edited)

No, we both went to Ballygaunj Science college for our masters. But we used to go to presidency because, few classes were there, the canteen, but more importantly; amra “rajneeti korte jetam”

PS regarding pictures; you are forgetting this is before 1998. We neither had cellphone or digital camera. Those days photos and Facebook didn't exist and we neither missed it nor cared.

0
0
0.000
avatar

The student politics of 80s, 90s. What a fabulous thing we had.

Of course there was not, however some pictures were taken by analog cameras right? Momentums? Must be missed moments!

Does not have to be in a way at this erra, but it would be a lie to assert those pictures of those times, taking perhaps once or twice a year, in every big events, were of no values.

0
0
0.000