কল্পনার ভ্রম
পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আগমণ ঘটেছিল রিজুর। দৈহিক গড়নে, বরণে এতই আকর্ষণীয় ছিল যে বিকেলে বাড়ির বাইরে খেলতে বেরুলে রাস্তা দিয়ে কোনো আগন্তুক হেটে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে যদি তার উপর চোখ পড়ে যেতো, কাছে নিয়ে একবারের জন্য ছেলেটিকে পরখ না করে আর থাকতে পারত না। এজন্য বেশিরভাগ সময় ছেলেটিকে একা বাইরে যাওয়ার আনুমতি দেয়া হতো না। তার মা যতটুকু সময় পেত তাকে আগলে রাখত, তাকে নিয়ে বাইরে বের হতো। পাড়ার মহিলাদের সাথে ক্ষণিকের জন্য আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে গেলেই, কেউনা কেউ এসে তার গালদুটি ধরে আদর করে একটু টেনে দিবে যা ভারী অসহ্যকর লাগত তার। বাড়ির পাশের ছোট মাঠটিতে সে তার সমবয়সীদের সাথে ছুটাছুটিও বন্ধ করে দিল এ কারনে।
একবার ত রীতিমতো এক অবাক করা কান্ডই ঘটেছিল তার সাথে। বাকি দিনগুলোর মতো একদিন বিকেলে বাড়ির সামনে তার মার সাথে দাঁড়িয়ে ছিল সে, হঠাৎ রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া এক মহিলা তার দিকে চোখ পরতেই থেমে যায় এবং তার কাছাকাছি এসে কথা বলার জন্য উদ্ধত হয়ে পরল। কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যাবার সময়, তার মার হাতে একশ টাকার একটা চকচকা নোট জোর করে গুজে দিয়ে বলল, " তাকে এ টাকাটা দিয়ে কিছু কিনে দিয়েন। " এ কান্ড দেখে ত তিনি রীতিমতো অবাকই হয়ে গেলেন। কারন ঐ মহিলার সাথে না আগে থেকে উনার পরিচয় না, আগে কখনো তাকে এদিকে দেখে বলে উনার মনে হচ্ছিল না, হঠাৎ করে কেউ এসে এভাবে টাকা দিয়ে যাবে, যা উনার মোটেও পছন্দ হচ্ছিল না।
তাই উনি জোরপূর্বক টাকাটা ফিরিয়ে দেবার ভীষণ চেষ্টা করার পরও, মহিলাটি তা ফিরিয়ে নিতে অপারগতা জানালো। অবশেষে ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে এরাস্তা দিয়ে চলে গেলেন। এরপর প্রতি বিকেলে বাড়ির সামনে দাড়ালেও সেই মহিলাটিকে আর দেখা মিলে না।
এরপর থেকে বাইরে তার তেমন একটা যাওয়া হয়ে উঠত না। ঘরের মধ্যে তার বড় ভাইয়ের সাথেই বিকেলের অবসর সময়টা একসাথে কাটত। ভাইয়ের সাথে ভীষণ ভাব তার। আর ভাব হবেই বা না কেন, গল্প শুনতে ভীষণ পছন্দ তার। আর সে যখনই আবদার করত তার ভাই তার সাথে সময় দিত এবং গল্প বলে বলে তাকে ভুলিয়ে রাখত, বিড়াল ভীষণ পছন্দ তার৷ তার ভাই যে বিশিষ্ট গল্পকথক এমনটা বললে ভুল হবে। সারাদিন রিজু যা যা করত বা করতে চাইত তা বিড়ালে চরিত্রে বসিয়ে রুপকথার সাথে মনে মাধুরি মিশে কিছু একটা বলিয়ে বলিয়ে গল্প মিলিয়ে ফেলত।
আর ধীরে ধীরে তার ভাই তার কাছে আরও বেশি পছন্দের হয়ে উঠে। সে আর কারও কথা শুনতে না চাইলেও তার ভাইয়ের কথা ভীষণভাবে মানত কারন তা না হলে ত আর ভাই গল্প শোনাবে না। কিন্তু রুপকথার গল্পগুলো নিয়ে তার কল্পনার জগতের গিয়ে কল্পনা করতে থাকত। আর রুপকথার গল্পগুলো সত্য বলে ধরে নিতো।
এমনকি সে তার ঘুমে স্বপ্নের মধ্যে তার ভাইয়ের গল্পের জগতে নিজেকে খুঁজে পেতো। আর স্বপ্ন ভেঙে গেলে কল্পনার জগত থেকে বাস্তব জগতে পুনরায় ফিরে এলে তার ভীষণ খারাপ লাগত। দিনকে দিন তার কল্পনার রুপকথার জগত ভালো লাগতে থাকে আর বাস্তব পৃথিবী থেকে সে দূরে থাকতে চায়। এসব তার ভাই ভালোই লক্ষ্য করল এবং ভাবলো ঘর থেকে বাইরে বের করে তাকে বাস্তব জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে না দিলে তার মধ্যে বাস্তব জগত আর কল্পনার জগতের মধ্যে আসল যে পার্থক্যবোধ তার মধ্যে সৃষ্টি হবে না।
কল্পনার ভ্রম ভাঙ্গার জন্য প্রতিদিন বিকাল হলে রিজুকে নিয়ে তার ভাই বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতো, একেক দিন একেক জায়গায় নিয়ে যেতো এবং নতুন সব জিনিসের সাথে রিজুকে পরিচয় করিয়ে দিতো এবং এর ফলে কল্পনার ভ্রম কাটিয়ে ধীরে ধীরে সে সত্যিকারের বাস্তব জগত চিনতে পারল এবং বাস্তব এবং কল্পনাত জগতের মাঝে যে বিশাল ফারাক রয়েছে তার বুঝতে পেলো।
Hi @riazud, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON