মারায়ং তং : মেঘ ও পাহাড়ের রাজ্য!

avatar

আঁকা বাঁকা ইটের রাস্তা ধরে পথটা উচুতে উঠে চলে গিয়েছে পাহাড়ের একদম সর্বোচ্চ চূড়ায়। পায়ে হেঁটে উঠতে ভীষণ কষ্ট। প্রায় ৪৫-৫০ ডিগ্রি এঙ্গেলে উঁচু রাস্তায় পায়ে হেঁটে উঠে যাওয়া সাধারণ কোনো কথা না৷ তবে স্থানীয়রা বাইক দিয়ে খুব সহজেই এই রাস্তায় উঠা নামা করে বেড়ায়। আমাদের অবশ্য বাইকে চড়ে পাহাড়ে উঠার কোনো ইচ্ছে ছিল না। তাই কষ্ট হলেও পায়ে হেঁটে মারায়ং তং এর চূড়ায় যাওয়াটাই যেন আমাদের একমাত্র লক্ষ।

এই পাহাড়টা পুরো বাংলাদেশের সবার কাছে মারায়ং তং নামে পরিচিত হলেও স্থানীয়দের কাছে এর আরো বেশ কয়েকটি নাম আছে। যেমন মেরাইথন জাদি, মারায়ং ডং ইত্যাদি। একেক দল একেক নামে ডাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬৪০ ফুট উচু এই পাহাড়ের বিশেষত্ব হল এই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘ ও পাহাড়ের অপূর্ব এক মিলনদৃশ্য দেখা যায়। যেই সৌন্দর্য্য কারো পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।

যদিও কয়েকবছর আগেও এই পাহড়টা পর্যকটকের কাছে অজানাই ছিল। সর্বোচ্চ চূড়ায় এক বৌদ্ধ মন্দির আছে, যেখানে গৌতম বুদ্ধের বিশাল এক মূর্তি। স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে এই পাহাড়ের চূড়া একপ্রকার উপসনালয় কিংবা তীর্থস্থান হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ তা একটা পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে। যেখানে পর্যটকেরা আসে এবং তাবুর নিয়ে রাতের বেলায় ক্যাম্পিং করে পরদিন চলে যায়।

মারায়ং তং এর অবস্থান বান্দরবান জেলার আলীকদমে। ছোটবেলায় আলীকদমে প্রায় ২ বছরের মতো ছিলাম। তখন শুধু আলীর গুহা আমাদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। মারায়ং তং এর নাম শুনলেও এইটা যে এত সুন্দর একটা স্থান, তা জানতাম না। জানলে হয়তো স্কুল ফাঁকি দিয়ে মারায়ং তং এর চূড়ায় উঠে বসে থাকতাম।

যেহেতু আগে কখনো মারায়ং তং যাবার সুযোগ হয় নি, এবং গত কয়েকবছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত মারায়ং তং এর সুন্দর সুন্দর ছবি, ভিডিও ও রিভিও দেখে যাচ্ছি, তাই প্রথম থেকেই সেখানে যাবার জন্য আমি মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে সুযোগ করে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু হুট করে এবার সুযোগ পেয়ে গেলাম। অবশ্য মারায়ং যাবার সুযোগ পাই নি। বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে বান্দরবান যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আর সেখানে গিয়েই মূলত মারায়ং তং এত দিকে চলে গিয়েছিলাম।

শুধু মারায়ং তং না, আলীকদমের আরো ভেতরে অর্থাৎ কুরুকপাতার দিকে চলে গিয়েছিলাম, যা ওদিকের বাংলাদেশের সীমানার সর্বশেষ ইউনিয়ন। পাহাড়, নদী ও ঝর্নার মিশেলে অপূর্ব সেই গল্পগুলো পরের লেখায় লিখব৷ কারণ আজ তো মারায়ং তং নিয়ে লিখতে বসেছি।

মারায়ং তং এ উঠাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য ছিল আমাদের জন্য৷ যদিও শুরুতে সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু কিছুটা পথ উঠার পর হুট করে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এমন এক সময় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল যে পেছনে ফিরে যাওয়ারও কোনো রাস্তা নেই৷ সেগুন গাছের বড় বড় সব পাতা দিয়ে নিজেদের বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার নিস্ফল চেষ্টা কিছুক্ষণ করার পর হাল ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টির মাঝেই হাঁটতে শুরু করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে ইটের রাস্তা যথেষ্ঠ পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। ফলে বার বার পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে কোনো ভাবে সামলে নিতে পেরেছিলাম। যদি দূর্ভাগ্যক্রমে কোনো একবার পা পিছলে পড়ে যেতাম, তাহলে গড়িয়ে গড়িয়ে কয়েকশো কিংবা হাজার ফুট নিচে পড়ে যেতে হতো৷

যায় হোক, বহু কষ্টের পির অবশেষে যখন পাগাড়ের চূড়ায় পৌছেছিলাম, তখন মেঘ ও পাহাড়ের অদ্ভুত সৌন্দর্য্যে সব কষ্ট যেন মুহুর্তের মাঝেই হারিয়ে গেল। চারপাশে মেঘ, বৃষ্টি আর সারি সারি পাহাড়ের মিলনমেলায় নিজেকে আবিষ্কার করে আমরা সকলে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। পাহাড়ের সেই সৌন্দর্য্যের গল্প পরের লেখায় করব। আজ এই পর্যন্তই...



0
0
0.000
2 comments
avatar

ওহ 😲 কি সুন্দর!

যেতেই হবে এই জায়গায়।

0
0
0.000
avatar

I have been to Sajek a few days ago. Your photos reminded me of the tour.
The beauty is breathtaking.
Mountains still have freshness, a touch of pure nature which I miss when I visit the sea.

0
0
0.000