কক্সবাজার ভ্রমনগল্প ২k23 || PART-2
কক্সবাজারে আমাদের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয় হোটেল কল্লোলে বুফে ব্রেকফাস্ট দিয়ে। এদিন সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমরা চলে যাই হোটেলের কল্লোলে অবস্থিত কাসুন্দি রেস্টুরেন্টে। এই রেস্টুরেন্টেই ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাদের সকালের নাস্তার। আমাদের মতো এখানে অনেকেই এসেছে সকালের নাস্তাটা সেরে নেওয়ার জন্য। বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে সাজানো হয়েছিলো বুকে ব্রেকফাস্ট। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো পরোটা, নুডুলস, ডিম ভাজা, ভুনা খিচুরী, চাইনিজ সবজি, কেক, পাউরুটি, পান্তা ভাত, বিভিন্ন রকমের সবজি, ফল, সফট ড্রিকংস, চা ইত্যাদি।
প্রয়োজনমত পছন্দের আউটেম গুলো দিয়েই শেষ করি সকালের নাস্তা৷ নাস্তা সেরে আবারো রুমে হালকা রেস্ট নিতে চলে আসি তিন বন্ধু। আজ আমাদের পরিকল্পনা প্রথমে সমুদ্রে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে হোটেলের সুইমিং পুলে এসে গোসল করে নেওয়া। যেহেতু বেলা বারোটার দিকে চেক আউট করতে হবে তাই গোসলের পর্বটা ১১ টার মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে। তারপর রোম ছেড়ে দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে মেরিন ড্রাইভে ঘুরে বেড়াবো। কিন্তু আমাদের এই পরিকল্পনায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটায় বৃষ্টি। সকাল থেকে অনবরত বৃষ্টির কারণে বের হওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পরেছিলো!
যেহেতু গোসল করবো তাই আর বৃষ্টির কথা চিন্তা না করে বেরিয়ে পড়লাম। সমুদ্র আজ বেশ উত্তাল। নিরাপত্তারক্ষীরা বারবার সতর্ক করছিল বেশি পানিতে না যাওয়ার জন্য। তিন নম্বর সর্তকতা সংকেত জারি করা হয়েছে কক্সবাজার এরিয়াতে। তাই তীরের কাছাকাছি থেকেই আমাদের সমুদ্রকে উপভোগের চেষ্টা। ভারী বৃষ্টিপাত হওয়াতে বীচে পর্যটক স্বাভাবিকের তুলনা অনেক কম ছিল। সেজন্য পরিবেশটাকে উপভোগের সুযোগটা ছিলো বেশি। এদিন কলাতলী থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে বেড়াই আমরা তিনজন!
সমুদ্রে তীরে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর এবার পালা হোটেলে ফিরে যাওয়ার। কেননা আজকের সুইমিং পুলের পর্বটা যে এখনো বাকি। হাতে সময়ও নেই তেমন। তাই সমুদ্রকে অনেকটা বিদায় দিয়েই ফিরলাম হোটেলে। হোটেলে এসেই নেমে পরি সুইমিংপুলে। আমাদের মতো অনেকেই এসেছে সুইমিংপুলে গোসলের উদ্দেশ্যে। এখানে বেস কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে এবার পালা চেক আউট করার; সময় যে ফুরিয়ে এসেছে!
হোটেলে চেক আউট করে অটোরিকশাতে করে আমরা এবার উপস্থিত শালিক রেস্টুরেন্টে। এখানেই আজকের দু'পুরের খাবার সারবো আমরা। রূপচাদা, চিংরি এবং গরুর চুইগুস্ত আজকে আমাদের সিলেক্টেড আইটেম। ওদের রান্না বেশ ভালো হলেও একটু ওভারপ্রাইজড মনে হয়েছে আমার কাছে। হোটেল পউসির তুলনায় এখানে সবকিছুর দামটা একটু বেশি৷ যাইহোক দুপুরের খাবার শেষে সিন্ধান্ত নিলাম মেরিন ড্রাইভে ঘুরে বেড়াবো। কিন্তু বিপত্তিতাটা বাধে বৃষ্টির জন্য।
রেস্টুরেন্টে বেশ কিছুক্ষন বসে থেকেও বৃষ্টি থামার কোন আশ্বাস পাচ্ছিলাম না। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই আমার দুই বন্ধু ভাড়ায় স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পরে মেরিন ড্রাইভ ঘুরার উদ্দেশ্যে। তবে আমি ভালো ড্রাইভার না হওয়াতে এবং বৃষ্টিতে ভিজতে অনিচ্ছুক হওয়াতে আর তাদের সাথে যাওয়া হলো না। একটা ছাতা নিয়ে আমি বের হয়ে পরি কলাতলি পয়েন্টের দিকে৷ সম্পূর্ণ বিকেলটা আমি এখানেই কাটিয়ে দেই এদিক সেদিক হাটাহাটি করে। তবে পুরোটা সময় জুরে একা একাই খুব কাছ থেকে উত্তাল সমুদ্রের রূপটা দেখার সুযোগ হয়েছিলো।
ভ্রমন শেষে ফিরার পথে বাধে সকল বিপত্তি। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে চট্রগ্রাম শহরে নানান জায়গায় পানি উঠেছে। চট্টগ্রাম - কক্সবাজার মহাসরকের উপর দিয়ে নাকি বইছে পানি; তাই অনেক গাড়িই তাদের সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। অনেক কষ্টে এনা পরিবহনে টিকেট কাটলাম একেবারে শেষের দিকে। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্য দিয়ে ৯.১৫ মিনিটে আমরা রওনা হই ঢাকার উদ্দেশ্যে। দুই ঘন্টা চলার পর বাধে বিপত্তি, চকরিয়া এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাওয়ায় গাড়ি সামনে এগুতে পারছিলোনা৷ রাস্তার আশেপাশের ঘরবাড়িগুলোও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এক জায়গাতেই চার ঘন্টা আটকে থাকে বাস।
তারপর কোন উপায় না পেয়ে রিক্ক নিয়েই বাস আস্তে আস্তে এগুতে থাকে চট্টগ্রামের দিকেই। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতেই লেগে যায় ১২ ঘন্টা৷ আমার ঢাকায় সকালে পৌঁছে অফিস করা করা থাকলেও তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। চট্টগ্রাম থেকে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে আব্দুল্লাহপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল ৪ টা। দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা এক অস্বস্তিকর জার্নির মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের এবারের কক্সবাজার ভ্রমণ। যা এক নতুন অভিজ্ঞতা!
আমার বাংলাদেশের মধ্যে সব থেকে বেশি ভালো লাগে কক্সবাজার,খুবই সুন্দর জায়গা। সমুদ্র ভালোলাগে না এমন খুবই কম মানুষ রয়েছে।।
সমুদ্রের প্রতি আমার একটু বেশিই ভালোলাগা কাজ করে। এই নিয়ে চার বার যাওয়া হলো কক্সবাজারে !
আমিও ইনশাল্লাহ অনেক তারাতারি একটা টুর দিয়ে আসবো।